ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.
সমস্যা
তিন বছর ধরে একটা মেয়েকে ভালোবাসি। মেয়েটিও আমাকে খুব ভালোবাসে। এতটাই ভালোবাসে যে ও ভাবে, সব ছেলেই খারাপ শুধু আমি ব্যতিক্রম। ওর নাম সুমি (ছদ্মনাম)। এদিকে কয়েক মাস আগে অন্য আরেকটি মেয়েকে আমার ভালো লেগে যায়। সেই মেয়েটিও আমাকে খুব ভালোবাসে। আমিও ভালোবাসি। ধরা যাক ওর নাম শান্তা। আমার কাছাকাছি থাকে বলে এখন শান্তার সঙ্গে নিয়মিত দেখা-সাক্ষাৎ হচ্ছে। সেটা সুমি জানে না। শান্তা সম্পর্কে সুমি যেটুকু জানে তা হচ্ছে, শান্তা আমার ফেসবুক বন্ধু, নিয়মিত কথা হয়—এটুকুই। শান্তার সঙ্গে আমার পরিচয় ফেসবুকে। প্রথম দিকে শান্তা জানত আমার কোনো ‘অ্যাফেয়ার’ নেই। এদিকে সুমির বিশ্বাস, আমি শুধু ওকেই ভালোবাসি। কিন্তু এ অবস্থায় আমার মনে হচ্ছে আমি দুজনকেই ভালোবেসে ফেলেছি। তারা উভয়ই আমার দুই বছরের ছোট। এদের কারও একজনের সঙ্গে সমস্যা হলে আমি মানসিকভাবে খুব ভেঙে পড়ি। বেশ কয়েকবার আত্মহত্যা করারও চেষ্টা করেছিলাম। সারাক্ষণ এ নিয়ে খুব মানসিক হতাশায় ভুগছি। রক্ষণশীল পরিবারের সন্তান হিসেবে কাউকে বলতেও পারছি না বিষয়টি। আমি মা-বাবার একমাত্র ছেলে। তাঁরা সবাই আমাকে খুব ভালোবাসেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
পরামর্শ
তুমি যে নিজের এই নৈতিক মূল্যবোধের দুর্বলতার দিকটি সততার সঙ্গে প্রকাশ করেছ, সে জন্য ধন্যবাদ। একজনকে ভালোবাসলে অথচ তাকে না জানিয়ে অন্য একটি মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক করলে, এতে দুটো সম্পর্কেই শ্রদ্ধা ও বিশ্বাসের অনেকখানি ঘাটতি হয়েছে।
ভালোবাসার সঙ্গে এই দুটোর মিশ্রণ না থাকলে সেটিকে সত্যিকারের ভালোবাসা বলা যায় না। তবে সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয় হচ্ছে, তুমি নিজের ক্ষতি করার জন্য কয়েকবার আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছ। খুব ভালো করে ভেবে দেখার চেষ্টা করো, এটি কি তুমি এদের মনোযোগ আকর্ষণের জন্য বা সমবেদনা পাওয়ার উদ্দেশ্যে করছ, নাকি নিজের ওপর রাগ করে?
অন্যের কাছে সমবেদনা চাওয়ার চাইতে কিন্তু নিজের প্রতি সহমর্মিতা ও সম্মান থাকলে তা অনেক মানসিক প্রশান্তি তৈরি করে।
তুমি যেহেতু এখন সচেতন হয়েছে, সেহেতু আর দেরি না করে এ ধরনের হঠকারিতা থেকে বেরিয়ে এসো। তুমি নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ ওরা যখন এ ব্যাপারে নিশ্চিত হবে, তখন দুজনই তোমাকে কৃপার দৃষ্টিতে দেখবে। এরপর তারা তোমাকে কোনোভাবেই বিশ্বাস বা শ্রদ্ধা কোনোটিই করতে পারবে না। এতে তোমার ভেতরে অপরাধবোধ বেড়ে যাবে।
কাজেই তাদের আর প্রতারিত না করে অকপটে তোমার চরিত্রের দুর্বলতার কথাটি প্রকাশ করো। তারা যা সিদ্ধান্ত দেবে, সেটিকে মাথা পেতে গ্রহণ করার মতো মনোবলও তোমাকে তৈরি করতে হবে। একই সঙ্গে দুটো ভালোবাসার সম্পর্ক চালিয়ে গেলে তোমাদের তিনজনের মানসিক স্বাস্থ্যই মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে করে সবাইকেই অনেক বড় মূল্য দিতে হতে পারে। তুমি যোগব্যায়াম, মেডিটেশন ইত্যাদি করে মনকে প্রশান্ত রাখতে সহায়তা করবে।
আত্মহত্যার প্রবণতাটি যদি থেকেই যায়, তাহলে অবশ্যই তোমাকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত মনোবিজ্ঞানী ও মনোচিকিত্সকের সাহায্য নিতে হবে।