বাংলাদেশর প্রধান দুটি সমুদ্র সৈকত কক্সবাজার ও কুয়াকাটার আশপাশে বসবাস করেন রাখাইন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর প্রচুর মানুষ। এ নৃগোষ্ঠীর বর্ষবরণ উৎসবের আকর্ষণীয় অংশ হল পানিখেলা। কক্সবাজার শহর এবং আশপাশের রাখাইন আধিবাসীরা এ পানিখেলার আয়োজন করেন ১৭ থেকে ১৯ এপ্রিল।
সাগরকন্যা কুয়াকাটা এলাকায় বসবাসরত রাখাইন সম্প্রদায়ও একই সময়ে পানিখেলা বা জলকেলি উৎসবের আয়োজন করে।
কক্সবাজার
কক্সবাজারের রাখাইন সম্প্রদায় বিভিন্ন উৎসবের মধ্য দিয়ে পালন করেন বাংলা নববর্ষ। চৈত্র সংক্রান্তি থেকে এ উৎসব শুরু হয়ে চলে প্রায় সপ্তাহজুড়ে। তবে এর আকর্ষণীয় পর্ব পানি খেলা শুরু হয় বৈশাখের চতুর্থ দিন থেকে। আর চলে ষষ্ঠ দিন পর্যন্ত।
ইংরেজী তারিখ হিসেবে রাখাইনদের এ পানি খেলা হয় ১৭ থেকে ১৯ এপ্রিল।
কক্সবাজারে রাখাইন সম্প্রদায়ের এ উৎসবের মূল জায়গা হল শহরের খ্যায়াং পাড়া, হাংগর পাড়া, মাঝপাড়া, বড় বাজার, মাছপাড়া, চাউল বাজার ও টেকপাড়া। বাড়ির আঙিনায় আঙিনায় এখানে চলে পানি খেলার আয়োজন। সঙ্গে রাখাইন সম্প্র0দায়ে সব বয়সের নারী পুরুষের সম্মিলিত নাচ আর গান।
মূল উৎসবে রাখাইন যুবকরা বাদ্য আর গানের তালে তালে এসে উপস্থিত হন বিভিন্ন বাড়ির আঙিনায়। সেখানে ফুলে ফুলে সুজ্জিত প্যান্ডেলের ভেতরে পানি নিয়ে অপেক্ষা করেন রাখাইন তরুণীরা। চলে একে অপরকে পানি ছিটানো।
পানিকে পবিত্রতার প্রতীক ধরে নিয়ে রাখাইন তরুণ-তরুণীরা পানি ছিটিয়ে নিজেদের শুদ্ধ করেন। পুরানো বছরের সব কালিমা আর জীর্ণকে ধুয়ে নতুন বছর বরণ করে নেন তারা। এ উৎসব উপলক্ষে এ সময়ে সবাই নতুন পোশাক পরেন।
রাখাইনদের এ জলকেলি উৎসব দেখার পরে বেড়াতে পারেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ আশপাশের দর্শনীয় স্থানগুলোতেও।
কক্সবাজার শহর ছাড়াও পার্শ্ববর্তী রামু উপজেলার হাইটুপি, টেকনাফের খ্যায়াংখালী ও চৌধুরী পাড়া এবং মহেশখালী উপজেলা শহরেও পানিখেলার আয়োজন করেন স্থানীয় রাখাইন অধিবাসীরা।
যাতায়াত ও থাকা
সড়ক ও আকাশ পথে ঢাকা থেকে সরসরি কক্সবাজার যাওয়া যায়।
ঢাকা থেকে সড়কপথে টি আর ট্রাভেলস, সেন্টমার্টিন সার্ভিস, দেশ ট্রাভেলস, সোহাগ পরিবহন, গ্রিনলাইন পরিবহন, সৌদিয়া পরিবহন, হানিফ এন্টারপ্রাইজের, এসি বাস কক্সবাজার যায়। ভাড়া ১ হাজার ৬শ’ থেকে ২ হাজর ৫শ’ টাকা। এছাড়া এস আলম, সৌদিয়া, ইউনিক, শ্যামলী, হানিফ, ঈগল প্রভৃতি পরিবহনের নন এসি বাসও চলে এ পথে। ভাড়া ৮শ’ থেকে ৯শ’ টাকা।
ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স, নভো এয়ার, ইউএস বাংলা এয়ার, রিজেন্ট এয়ার ও ইউনাইটেড এয়ারওয়েজের বিমান যায় সৈকত শহর কক্সবাজারে।
কক্সবাজার শহরে বিভিন্ন মানের বেশ কিছু হোটেল রিসোর্ট রয়েছে। পাঁচ তারকা থেকে শুরু করে সব ধরনের হোটেল আছে এ জায়গায়। কক্সবাজারে সাধারণত ৫শ’ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ হাজার টাকায় হোটেল কক্ষ মিলবে। এসময়ে কক্সবাজারের হোটেলগুলোতে ‘অফ সিজন’ ছাড় পাওয়া যাবে।
কুয়াকাটা
রাখাইন সম্প্রদায়ের অন্যতম সামাজিক এ উৎসব দেখা ছাড়াও কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে দেখে আসতে পারবেন সূর্যোদয় ও সূর্যাস্ত।
কুয়াকাটার সবচেয়ে বড় জলকেলি উৎসবের আয়োজন থাকে গোড়া আমখোলা পাড়ায়। এতে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে রাখাইন তরুণ-তরুণীরা এ উৎসবে যোগ দেন। তাদের বিশ্বাস এ দিনগুলোতে পরস্পরের প্রতি পানি ছুড়ে পাপ পঙ্কিলতাকে ধুয়ে ফেলা যাবে।
উৎসবে রাখাইন তরুণ-তরুণীদের সংগীত আর রাখাইন নৃত্যও উপভোগ্য।
যাতায়াত ও থাকা
ঢাকা থেকে কুয়াকাটা যাওয়ার সহজ উপায় হলো লঞ্চে বরিশাল কিংবা পটুয়াখালী গিয়ে সেখান থেকে বাসে কুয়াকাটা।
ঢাকার সদরঘাট থেকে বিআইডব্লিউটিএ’র রকেট স্টিমার পিএস মাহসুদ, পিএস অস্ট্রিচ এবং পিএস লেপচা, পিএস শেলা, পিএস টার্ন এবং এমভি বাঙ্গালী ও মধুমতিতে বরিশাল যাওয়া যায়।
এছাড়াও সদরঘাট থেকে প্রতিদিন রাতে বরিশালের উদ্দেশ্যে ছাড়ে এমভি সুন্দরবন, এমভি সুরভী, এমভি ফারহান, এমভি দ্বীপরাজ, এমভি কীর্তনখোলা, এমভি কালাম খান, এমভি পারাবাতসহ বিভিন্ন লঞ্চ।
ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যায় এমভি দ্বীপরাজ, এম ভি সৈকত, এম ভি সুন্দরবন, এম ভি রেড সান ইত্যাদি লঞ্চ।
বরিশালের রূপাতলী বাস স্টেশন ও পটুয়াখালী আন্তঃজিলা বাস স্টেশন থেকে ঘণ্টায় ঘণ্টায় কুয়াকাটার বাস আছে।
এছাড়া ঢাকার গাবতলী থেকে সাকুরা পরিবহন, সুরভী পরিবহন, দ্রুতি পরিবহনের বাসেও সরাসরি কুয়াকাটা যাওয়া যায়।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশনের ইয়ুথ ইন ও পর্যটন হলিডে হোমস ছাড়াও বিভিন্ন মানের হোটেল আছে।