পয়লা বৈশাখের ছোঁয়া লাগে মানুষের পোশাকে, অন্দরে, খাবার থেকে সবখানে। বাংলা নতুন বছর বরণ করে নেওয়ার এই উৎসবে মানুষ নিজে যেমন সাজতে ভালোবাসে, তেমনি সাজাতে ভালোবাসে আপন গৃহকোণকেও। সাজানোর উপকরণে দেশি ভাব থাকলে পুরো বাড়িটিই সেজে উঠবে উৎসবের রঙে।
বসার ঘর
সাজানোর ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারেন মাটির শোপিস, প্রদীপ, নকশি কাঁথা, হাতপাখা ইত্যাদি। মেঝের কোনো অংশে আঁকা যেতে পারে আলপনা। মেঝেতে বসার আয়োজনও করা যেতে পারে। সে ক্ষেত্রে শীতল পাটি, শতরঞ্জি, নকশি কাঁথা ইত্যাদির ওপর রঙিন কুশন ছড়িয়ে দিয়ে তৈরি করে নিন এই আয়োজন। হালকা কোনো রঙের স্বচ্ছ পর্দা লাগান। ঘরের কোনাগুলো সবুজ গাছ আর মাটির শোপিস দিয়ে সাজাতে পারেন। বিভিন্ন কোনায় রাখতে পারেন ল্যাম্পশেড। ভিন্নতা আনতে ঘরের এক কোনায় তিনটা ল্যাম্পশেড ঝুলিয়ে দিতে পারেন। প্রথমটি ছাদ থেকে ৭ ফুট, দ্বিতীয়টি সাড়ে ৬ ফুট ও তৃতীয়টি ৬ ফুট নিচে ঝুলবে। অন্দরসজ্জাবিদ গুলসান নাসরিন চৌধুরীর পরামর্শ, ‘এই সময়ে ঘরের সাজে লাল, সাদা, নীল, হলুদ, সবুজ রংগুলো প্রাধান্য দিতে পারেন।’
খাবার ঘর
এই ঘরের প্রধান অংশ হচ্ছে খাবার টেবিল। টেবিলটিকে সাজিয়ে তুলুন দেশীয় উপাদান দিয়ে। এ ছাড়া বাঁশ ও বেতের নান্দনিক ট্রের ব্যবহার আপনার বৈশাখের আয়োজনে বাড়তি সৌন্দর্য যোগ করবে। টেবিল রানারটি শীতল পাটি, বাঁশ অথবা নকশি কাঁথার তৈরি হতে পারে। রানারের ওপর মাটির মোমদানি, বাঁশের তৈরি গ্লাস স্ট্যান্ড ও মাটির ফুলদানিতে কিছু তাজা ফুল দিয়ে সাজালে টেবিলটি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। এই ঘরের পর্দা হিসেবে বাঁশের চিক ব্যবহার করলে ভালো লাগবে। এই ঘরের দেয়ালে টেরাকোটা ঝোলালে ঘরটিতে ভিন্ন মাত্রা যোগ হবে।
দেয়াল ও দরজা সাজানো যায় দেশি উপকরণেশোবার ঘর
শোবার ঘরে বিছানার চাদর ও পিলো কভারে ব্যবহার করুন উজ্জ্বল রং। চাদরের সঙ্গে মিলিয়ে নিন পর্দার রং। কাপড়ের ওপর আমাদের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি, লোকশিল্পের নানা মোটিফ থাকতে পারে। ঘরের পর্দা, বিছানার চাদর, কুশন কভার, টেবিল ক্লথ, টেবিল রানার ইত্যাদিতে দিতে পারেন রঙের ছোঁয়া। কাপড় নির্বাচনের ক্ষেত্রে আদ্দি, খাদি, সুতি, ভয়েল ইত্যাদি বেছে নিতে পারেন।
গুলসান নাসরিন চৌধুরী বলেন, ‘বিভিন্ন আকৃতির মাটির হাঁড়িতে নানা ধরনের ফুল এবং ইনডোর প্ল্যান্টসের ব্যবহার সুগন্ধি এবং সবুজের ছোঁয়া মন ভরিয়ে দেয় প্রশান্তিতে। ছোট-বড় কিছু পটারি দিয়ে সাজাতে পারেন সিঁড়িঘরকে। বাড়ির সদর দরজার দেয়ালে টাঙিয়ে দিতে পারেন মাটির, বেতের অথবা কাঠের কারুকার্য করা আয়না।’
অন্দরসজ্জা প্রতিষ্ঠান লুক লাইকের ডিজাইনার রাহেলা খাতুন নিজের বাড়ি সাজাতে প্রাধান্য দিয়েছেন দেশীয় উপকরণের ওপর। যান্ত্রিক ঢাকার ইট-কাঠের দালানে তিনি তুলে ধরেছেন নিজস্বতা। রাহেলা খাতুন বলেন, ‘বৈশাখ বাঙালির নিজস্ব সংস্কৃতির উৎসব। তাই অন্দরের সাজে দেশীয় জিনিসের ব্যবহার করে আনতে চেয়েছি নান্দনিকতা। ঘর সাজাতে হলে দামি উপকরণ লাগবে, এমন ধারণা অনেকেরই। এটা ঠিক নয়। ঘর সাজাতে চাই আন্তরিকতা ও নিজস্বতা।’ এ ছাড়া পুরো বাড়িতে আছে সবুজের স্নিগ্ধতা। ঘরের বিভিন্ন জায়গায় রেখেছেন বিভিন্ন ধরনের গাছ।
কোথায় পাবেন
উত্তরার দুর্লভে মাটির পট, প্রদীপ, ধাতব ও বাঁশের মুখোশ এবং বাঁশের মগ পাওয়া যাবে। মাটির পুতুল, গ্রামীণ হুঁকো, হাতে বানানো মুখোশ, ওয়াল ম্যাট, বাঁশের তৈরি ফুলদানি, আয়না, বেতের টেবিল, টেবিল ল্যাম্প, ঝাড়বাতি ইত্যাদিও আছে সেখানো। আসাদগেটের আইডিয়াসে পাওয়া যাচ্ছে ঘর সাজানোর মাটির উপকরণ। আড়ংয়ে আছে কাঁসা-পিতলের নানা ধরনের শোপিসের মধ্যে বিভিন্ন জীবজন্তুর প্রতিকৃতি, রিকশা, ফুলদানি, ঘটি, গ্লাস, কলস, পানের বাক্স, মোমদানি, ফুলের টব, দেয়ালে সাজানোর থালা। অ্যান্টিক এবং ব্রাশ অ্যান্টিক দুটোই পাওয়া যায়। আসাদগেটের ‘সোর্স’-এ পাওয়া যায় নানা ধরনের কাপড়, কাগজ এবং বিভিন্ন উপকরণে তৈরি শোপিস। এ ছাড়া কাচ, মাটি, চীনামাটির বিভিন্ন ধরনের শোপিসে আনা হয়েছে বৈচিত্র্য। পিরানে পাওয়া যাবে বিভিন্ন ধরনের উইন্ড চাইম। যাত্রায় রিকশা পেইন্ট ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে ঘড়ি, গয়না রাখার বাক্স, মোমদানি, ধূপদানিসহ অনেক কিছুই।
কৃতজ্ঞতা: রাহেলা খাতুন