বাইরে হিমেল হাওয়া বইছে, কদিন পর শীত জেঁকে বসলেই ধোঁয়া ওঠানো ভাপা পিঠা খাওয়ার মজা জমবে। কিন্তু গরম-গরম পিঠায় কামড় বসাতে গিয়েই বিপত্তি! ফেটে গেছে ঠোঁট। তার চেয়ে বরং শীতে ঠোঁট সুরক্ষিত রাখতে এখন থেকেই শুরু হোক পরিচর্যা। এ সময় ঠোঁট রাঙাতে কোন রংগুলো বেছে নেবেন, তা-ও জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। এই প্রসঙ্গে কথা হলো আয়ুর্বেদিক রূপবিশেষজ্ঞ রাহিমা সুলতানার সঙ্গে। তিনি জানিয়েছেন, আবহাওয়ায় আর্দ্রতার অভাব ও শরীরে পানিশূন্যতার জন্যই ঠোঁট শুকিয়ে যায়। আর ঠোঁটের রুক্ষতা বেড়ে গিয়ে একসময় ঠোঁট ফাটতে শুরু করে। ঠোঁট সতেজ ও কোমল রাখতে কীভাবে যত্ন নেবেন, সেই পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
সব সময় লিপবাম ব্যবহার করুনঠোঁটে আর্দ্রতাযুক্ত লিপবাম বা পেট্রোলিয়াম জেলি ব্যবহার করতে হবে। কেবল ঠোঁট ফেটে যাওয়ার পর নয়, বরং আগে থেকেই এটির ব্যবহার শুরু করতে হবে, তাহলে আর ঠোঁট ফাটার ভয় থাকবে না।
ঠোঁট শুকিয়ে গেলে জিব দিয়ে ঠোঁট ভেজান অনেকে, এটি একেবারেই করা যাবে না। সব সময় সঙ্গে লিপবাম রাখতে পারেন। বাজারে এসপিএফ ১৫ যুক্ত লিপবাম কিনতে পাওয়া যায়। এটি ঠোঁটকে সূর্যের তাপ থেকেও রক্ষা করে।
সপ্তাহে এক দিন সমপরিমাণ মধু ও পেট্রোলিয়াম জেলি মিশিয়ে ঠোঁটে লাগিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট রেখে দিন। এরপর পরিষ্কার তুলা দিয়ে আস্তে আস্তে তুলে ফেলুন, এতে ঠোঁট কোমল হবে।
ঠোঁট মোলায়েম রাখতে তিলের তেলও ব্যবহার করা যেতে পারে।
সমপরিমাণ গ্লিসারিন ও অলিভ ওয়েল একসঙ্গে মিশিয়ে ঠোঁটে লাগালেও তা ময়েশ্চারাইজারের কাজ করবে।
যাঁদের অতিরিক্ত ঠোঁট ফাটার প্রবণতা আছে, তাঁরা চালের গুঁড়ার সঙ্গে অল্প পানি মিশিয়ে ১৫ থেকে ২০ মিনিট এই মিশ্রণটি ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন। এতে ঠোঁটের মরা চামড়াগুলো সহজেই উঠে আসবে।
এ ছাড়া অতিরিক্ত ঠান্ডায় ঠোঁট অনেক সময় কালচে হয়ে যেতে পারে। রাহিমা সুলতানা জানান, অতিরিক্ত চা, কফি, পান ও ধূমপানের ফলেও ঠোঁট কালো হয়ে যেতে পারে।
.ঠোঁটের স্বাভাবিক রং ও গোলাপি আভা বজায় রাখার কিছু উপায় বাতলে দিয়েছেন রাহিমা সুলতানা।
গোলাপ ফুলের পাপড়ি বেটে মধুর সঙ্গে মিশিয়ে ২০ মিনিট ঠোঁটে লাগিয়ে রাখুন, ঠোঁটের গোলাপি ভাব ফুটে উঠবে।
কাঁচা দুধ তুলায় ভিজিয়ে ১০ থেকে ১৫ মিনিট ধরে ঘষুন।
ঠোঁটের কালচে ভাব ঠেকাতে কাঠবাদামের তেলও বেশ উপকারী।
কথা হলো হলি ফ্যামিলি হাসপাতালের চর্মরোগ বিভাগের অধ্যাপক আফজালুল করিমের সঙ্গে। তিনিও জানিয়েছেন, এই সময়ে বাতাসে আর্দ্রতা কম থাকে বলেই হাত-পায়ের মতো ঠোঁটের ত্বকও শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। এই সময় বাইরে বের হলেই ঠোঁটে লিপজেল বা ক্রিম-জাতীয় কিছু ব্যবহার করতে বলেন তিনি। তবে এ সময় ধুলাবালুর প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় জেল বা আঠালো-জাতীয় প্রসাধনীতে ধুলা আরও বেশি আটকে যেতে পারে। তাই বাইরে থেকে এসেই প্রথমে তুলা বা পাতলা কাপড় ভিজিয়ে ঠোঁট পরিষ্কার করে নিতে পারেন। পানি লাগানোর পরপর আবারও পেট্রোলিয়াম জেলি বা ভালো মানের গ্লিসারিন লাগিয়ে নিতে হবে।
এ ছাড়া শরীরের পানিশূন্যতা দূর করতে শীতে প্রচুর পরিমাণে পানি, গরম স্যুপ, তাজা ফলের শরবত খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা।
ঠোঁটে গাঢ় লিপস্টিক ব্যবহারের চল এখনঠোঁট রাঙাব যে রঙে
পারসোনার পরিচালক নুজহাত খান জানালেন, কিছুদিন ধরে শকিং বা খুব চড়া রঙের লিপস্টিকগুলো বেশ চলেছে, ইদানীং একটু কালচে শেডের রংগুলোই বেশি চলছে। গাঢ় বেগুনি, জাম রং, ইট লাল, কফি, বেরি রং এখন খুব চলছে। এ ছাড়া ওমব্রে ঢঙে লিপস্টিক দেওয়ার চলও এখন জনপ্রিয়। ঠোঁটের চারদিকে গাঢ় রং লাগিয়ে মাঝের অংশে একই রঙের অপেক্ষাকৃত হালকা শেডের লিপস্টিক দেওয়াটা ওমব্রে স্টাইল। নুজহাত জানালেন, দুটি রং সুন্দর মতো মিশিয়ে দিতে পারলে এটি দেখতে খুব ভালো লাগে।
এই ঋতুতে ম্যাট লিপস্টিকে ঠোঁট আরও বেশি শুষ্ক বোধ হতে পারে। তাই লিপস্টিক লাগানোর আগে পেট্রোলিয়াম জেলি দিয়ে ঠোঁট আর্দ্র ও কোমল করে নিতে পারেন। তবে এমন আবহাওয়ায় গ্লসি বা ক্রিমি লিপস্টিক লাগানোই ভালো।
বাইরে থেকে এসে তুলায় অলিভ ওয়েল লাগিয়ে লিপস্টিক সম্পূর্ণ তুলে ফেলতে যেন ভুলবেন না। ঠোঁটের চামড়া অনেক নাজুক থাকে, তাই জোরে ঘষা উচিত নয়, আস্তে আস্তে ঘষেই ভালোমতো তুলে ফেলুন।