বাংলা নববর্ষের আগে আগে এখন সবখানেই সাজ সাজ আয়োজন। নববর্ষকে বরণ করে নিতে সবাই নিজেকে সাজিয়ে নেবেন সাদা-লাল রঙে। এই দিন চুলের সাজে ফুলের ব্যবহার নিয়ে আসবে নান্দনিকতা।
লাল-সাদা রঙের শাড়ি, হাতভরা কাচের চুড়ি, চোখে কাজল আর খোঁপায় গুঁজে দেওয়া ফুল—এই হলো মেয়েদের নববর্ষের ষোলো আনা বাঙালি সাজ। বললেন, কণ্ঠশিল্পী ফাহমিদা নবী। উৎসব কিংবা অনুষ্ঠানে চুলে ফুল না হলে তাঁর চলে না। নিজের ব্যক্তিত্ব, ভালো লাগা, গড়ন—সব মিলিয়ে তিনি খোলা চুলে, কানের পাশে পছন্দের যেকোনো ফুল গুঁজে নেন। সব ধরনের ফুলই তাঁর ভালো লাগে। হতে পারে সেটা পথের পাশে ফুটে থাকা নাম না জানা বুনোফুল, ঘাসের ডগাসহ ঘাসফুল। কখনো শুধু শিকড় ফেলে দিয়ে ফুলসহ পুরো গাছটাই গুঁজে নেন চুলে। আবার কখনো ফুলের বদলে কচি সবুজ পাতাও চুলে পরে নেন। তবে সব থেকে বেশি ভালো লাগে দোলনচাঁপা, বেলি আর কাঠগোলাপ। চুলে ফুল সাজানো হলেই তাঁর মনে হয় সাজটা পরিপূর্ণ হয়েছে।
ছিমছাম খোঁপায় যেকোনো ফুলের সাজই পয়লা বৈশাখের আনন্দকে দ্বিগুণ করে দেয়। নিখুঁত, নিপাট, সাধারণ একটি খোঁপায় ফুল লাগিয়ে নিলে সবার মাঝে থেকেও একজনকে খুব আলাদা লাগে। এমনটাই জানালেন রূপবিশেষজ্ঞ তানজিমা শারমিন। তাঁর মতে, কাকে, কোন ধরনের খোঁপায়, কোন ফুলে কেমন লাগবে, সেটা বুঝে নিতে কয়েকটি বিষয় খেয়াল রাখা উচিত। যেমন কপালের ধরন, গলার দৈর্ঘ্য, চুলের ধরন, মুখের গড়ন ইত্যাদি। এসব একটু খেয়াল করে খোঁপাটি বেঁধে নিলে দেখতে অনন্য লাগবে।
তানজিমা শারমিন চুল বাঁধার কয়েকটি ধরনও জানালেন।
ববি খোঁপা মডেল: সায়রা সাজ: মিউনিস ব্রাইডাল শাড়ি: দেশাল ছবি: নকশাববি খোঁপা: এ খোঁপাটি করতে, মাঝখানে সিঁথি করে দুই পাশে দুটি পনিটেইল করে নিতে হবে। এবার দুদিকেই খানিকটা ফোল্ড করে চুলগুলো ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে পিন দিয়ে আটকে নিতে হবে। দীর্ঘ সময় রাখতে হেয়ার স্প্রে করে নিলে ভালো হবে। সারা দিন চুলের সাজে কোনো ঝক্কি সামলাতে হবে না।
টুইস্ট খোঁপা: সামনে ও পেছনে অর্ধেক চুল দুই ভাগে ভাগ করে নিন। পেছনের ভাগের কিছু চুলে খোঁপা করে ক্লিপ দিয়ে আটকে নিন। এবার বাকি যে চুলগুলো আছে, সেগুলো কয়েক ভাগে ভাগ করে টুইস্ট করে পেঁচিয়ে মূল খোঁপার সঙ্গে মিলিয়ে সেট করে নিতে হবে। সঙ্গে খোঁপায় পরে নিন জারবেরা, কাঠগোলাপ বা জিনিয়া ফুল।
রিং লেটস রোল: সামনের চুলের মাঝখানে বাঁ পাশে সিঁথি করে নিতে হবে। কপাল বড় হলে সাইডে সিঁথি করুন। না হলে মাঝ বরাবর সিঁথি টেনে সেট করে নিন। তারপর পেছনের চুলে পনিটেইল করে ওই চুলগুলোকে সমান কয়েক ভাগে ভাগ করে নিন। চুলগুলো পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে ক্লিপ দিয়ে আটকে নিতে হবে। এরপর হেয়ার স্প্রে করতে হবে। এতে দীর্ঘ সময় ধরে খোঁপাটি ঠিকঠাক থাকে। এবার এক পাশে অথবা প্যাঁচানো চুলের রিঙের ভাঁজে ভাঁজে পরতে পারেন পছন্দের যেকোনো ছোট ছোট ফুল।
আবার যাঁরা চুল ছাড়া রাখতে চান, তাঁরা চুল সেট করে নিয়ে যেকোনো এক পাশে কসমস, ডালিয়া চন্দ্রমল্লিকা পরে নিতে পারেন। ছোট চুলের অল্প বয়সী মেয়েরা হেয়ার ব্যান্ডের মতো করে পরে নিতে পারেন রজনীগন্ধার মালা বা কাঠবেলির লহর। সঙ্গে এক পাশে জুড়ে দিতে পারেন একটি গোলাপ কলি। চুলে ফুল সাজাতে বাজারে পাওয়া যায় নানা রকমের তাজা ফুল। মনের মতো চুল সাজিয়ে পরে নিতে পারেন বাসার পাশেই ফুটে থাকা সাদা টগর। বেণির ভাঁজে, খোলা চুলে কানের পাশে গুঁজে রাখতে পারেন অপরাজিতার একটা ফুল অথবা খোঁপায় এক থোকা বাগানবিলাস কিংবা মাধবীলতার কয়েকটি পাতা।
দিনভর উৎসব-আনন্দে চুল যেন রোদ, গরমে কোনো বিরক্তির কারণ না হয়, সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। ভালো করে চুলটা বেঁধে নিলে কেটে যাবে দীর্ঘ সময় ফুরফুরে মনে বৈশাখী দিন।