ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এডুকেশনাল অ্যান্ড কাউন্সেলিং সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক মেহতাব খানম। তিনি আপনার মানসিক বিভিন্ন সমস্যার সম্ভাব্য সমাধান দেবেন। অল্প কথায় আপনার সমস্যা তুলে ধরুন।—বি. স.
সমস্যা
আমি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে পড়ছি। পড়াশোনার জন্য চার বছর ধরে বাড়ির বাইরে আছি। বছর খানেক আগে হঠাৎ আমার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। যেমন, মেসে থাকতে ভালো লাগে না, শুধু বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে। পরিবারের সঙ্গে, বিশেষ করে মায়ের সঙ্গে থাকতে ভালো লাগে। কিন্তু পড়াশোনা করতে হলে বাড়ির বাইরে থাকতেই হবে। আমি আগে একা একাই বেশি থাকতাম, এ জন্য আমার ভালো কোনো বন্ধু নেই। বাড়িতে বাবার মৃত্যুর পর মাও একা হয়ে গেছেন। বাসায় থাকলে পড়াশোনা নিয়ে টেনশন হয়। ইচ্ছে করে এখনই মেসে চলে যাই। কিন্তু মেসে এলে আবার ভালো লাগে না। বাসায় যেতে ইচ্ছে করে। আমি আমার উভয়সংকট বুঝতে পারি। কিন্তু নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না। সামনে আমার ফাইনাল পরীক্ষা।
নাঈম খান, সিলেট।
পরামর্শ
তুমি লিখেছ এক বছর ধরে সমস্যাটি হচ্ছে। ঠিক তার আগে কি কোনো নেতিবাচক ঘটনা ঘটেছিল? তোমার বাবা ঠিক কবে মারা গেছেন তা জানাটাও প্রয়োজন ছিল। এরপর থেকেই কি তোমার মনে হচ্ছে যে মাকে সঙ্গ দেওয়া তোমার বেশি প্রয়োজন? আমাদের জীবনে বন্ধুত্ব অনেক গুরুত্বপূর্ণ। একটি বয়সের পরে আমরা পরিবারের বাইরের কিছু মানুষের সঙ্গেও আন্তরিক সম্পর্ক গড়ে তুলি। কোনো কিছু নিয়ে মানসিক চাপ সৃষ্টি হলে বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে কথা বলে আমরা কষ্ট লাঘব করার চেষ্টা করি। বন্ধুর অভাব বা কাছের মানুষের অনুপস্থিতির কারণে মনের দ্বন্দ্বটি নিয়ে তুমি আলোচনা করতে পারছ না। এখন তোমাকে নিজে নিজেই চেষ্টা করতে হবে নিজের মনকে বুঝতে। তুমি একটি কাগজে লিখে ফেল যখন মেসে যাচ্ছ তখন তোমার কী কী অনুভূতি বা আবেগ হচ্ছে। আবার যখন মায়ের কাছে যাচ্ছ তখন তোমার কী অনুভূতি ও ভাবনাগুলো হচ্ছে তাও লিখে ফেল। যেহেতু তোমাকে পড়াশোনায় মনোযোগী হতে হবে, সেই কারণে মেসে থাকাটা এই মুহূর্তে খুব জরুরি। তুমি সেখানে থাকার সময় যে চিন্তাগুলো করতে থাকো, সেগুলোর মধ্যে পরিবর্তন আনতে হবে। নিজেকে উত্সাহ দিয়ে মেসে থাকলে তোমার কী উপকার হবে সে কথাগুলোও লিখে ফেলবে। মায়ের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ তো তুমি রাখতেই পারো, তাই না? তাকে বলো, তিনি যেন তোমাকে মেসে মন বসাতে উৎসাহিত করেন। এ ছাড়া তুমি চেষ্টা করো মেসে অন্তত দু-একজনের সঙ্গে ভালো বন্ধুত্ব তৈরি করতে। বাবা যেহেতু গত হয়েছেন, তোমাকে কিন্তু পড়াশোনা শেষ করে উপার্জনক্ষম হতে হবে।