প্রতিদিন সকালে চোয়াল বা মাথা ব্যথা নিয়ে ঘুম ভাঙছে দেখে আশ্চর্য হচ্ছেন। আপনার হয়তো ধারণা নেই কে এমন হচ্ছে, কারণ আপনি রাতে ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড় করেন তা অন্যরা টের পেলেও আপনি পান না। নাক ডাকার সাথেও এর সম্পর্ক খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা।
এই ব্রুক্সিং বা দাঁত কিড়মিড় করার হাত থেকে কিভাবে মুক্তি পাবেন তার ৭টি উপায় আপনাকে জানাতে যাচ্ছি। এই উপায়গুলো আপনাকে আরো ভালো ঘুম এবং স্বাস্থ্যবান দাঁতের নিশ্চয়তা দেবে।
ব্রুক্সিজম
অসচেতন অবস্থায় উপরের ও নিচের দাঁতের পরস্পর ঘর্ষণকেই বলে ব্রুক্সিং। সাধারণভাবে আমরা যাকে বলি দাঁত কিড়মিড় বা দাঁত খিঁচানি। অন্যমনস্ক থাকলে, চিন্তিত থাকলে কিংবা মেজাজ খারাপ থাকলে অনেকেই এটা করে থাকেন। ঘুমন্ত অবস্থায়ও অনেকে ব্রুক্সিং বা দাঁত কিড়মিড় করেন। ব্রুক্সিং-এর কারণে দাঁতের স্পর্শকাতরতা বেড়ে যায়। আর তাই ঠাণ্ডা বা গরম কিছু খাওয়ার সময় হঠাত্ করে দাঁত শিরশির করে ওঠে। অনবরত ব্রুক্সিং-এর ফলে দাঁতে প্রচণ্ড ব্যথা হতে পারে।
ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
এই সমস্যা দূর করার জন্য প্রথমেই যেটা করতে পারেন তা হলো ক্যাফেইন এবং অ্যালকোহলযুক্ত খাবার খাওয়া বাদ দেওয়া। ক্যাফেইন আমাদের দেহকে চনমনে রাখে এবং প্রচুর পরিমাণে চা, কফি, কোমলপানীয় ইত্যাদি খেলে তা রাতের বেলাও শরীরের উপর কাজ করে। ফলে দাঁত কিড়মিড় করার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। একই ভাবে অ্যালকোহলযুক্ত খাবার কিংবা পানীয় আমাদের দেহে অস্থিরতা তৈরি করে এবং নিয়মিত খেলে এই সমস্যাকে বাড়িয়ে তোলে।
মানসিক চাপ কমান
দাঁত কিড়মিড় করার অন্যতম প্রধান কারণ মানসিক চাপ। মানসিক চাপে দিনের বেলায় অস্থিরতা এবং রাতে ঘুমের সমস্যা তৈরি হয়। তাই মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিৎ। মেডিটেশন এবং যোগ ব্যায়াম আপনাকে অনেক বেশি সাহায্য করবে মানসিক চাপমুক্ত থাকার জন্য।
খাবার নয় এমন জিনিস চিবানো বন্ধ করুন
আমাদের মধ্যে ছোটবেলার অনেক বদ অভ্যাস বড় হওয়ার পরও রয়ে যায়। যেমন, কলম কামড়ানো, নখ কামড়ানো। এইসব অভ্যাস থেকেও রাতে ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড় করার প্রবণতা তৈরি হয়। তাই এই ধরনের বদ অভ্যাস থেকে নিজেকে মুক্ত করুন।
ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার খান
শরীরে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামের অভাব দেখা দিলে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে। এর প্রভাব চোয়ালের পেশির উপরও পড়ে। ফলে দাঁত কিড়মিড়ের মতো ঘটনার জন্ম দেয়। তাই প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাসে ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার রাখা উচিৎ।
দাঁতের গতিবিধি লক্ষ্য করুন
দিনে বেলায় দাঁতের গতিবিধি লক্ষ্য করুন। এতে আপনি বুঝতে পারবেন কখন কোন পরিস্থিতিতে আপনার দাঁত কিড়মিড় করে। ওই পরিস্থিতি বা সময়গুলো যখন নির্দিষ্ট করবেন তখন দাঁতকে সংবরণ করার জন্য আপনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন। এই সময়গুলোতে আপনার চোয়ালের পেশি সহজ করে দিতে পারলে এই সমস্যা দূর হতে শুরু করবে। ফলে রাতে ঘুমের মধ্যে দাঁত কিড়মিড় করার অভ্যাসও ধীরে ধীরে চলে যেতে শুরু করবে।
ঘুমের আগে পুরোপুরি রিল্যাক্স হয়ে নিন
ঘুমনোর আগে কোনো দুশ্চিন্তা মাথায় রাখবেন না। অনেকেই হাজার চিন্তা নিয়ে বিছানায় যান। যার ধারাবাহিক প্রতিক্রিয়া হিসাবেও দাঁত কিড়মিড়ের প্রমাণ পাওয়া যায়। তাই ঘুমের আগে দুশ্চিন্তামুক্ত থাকুন এবং প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমতে যান।
মাউথ গার্ড ব্যবহার করুন
বড় ফার্মেসি বা সুপারশপগুলোতে সিলিকন মাউথ গার্ড কিনতে পাওয়া যায়। রাতে ঘুমনোর আগে পরিষ্কার মাউথ গার্ড দাঁতে লাগিয়ে নিলে দাঁত কিড়মিড় করার প্রবণতা কমে যায়। যদি কেনা মাউথ গার্ড দাঁতে ঠিক ভাবে না বসে তাহলে একজন ডেন্টিস্টের কাছে এ বিষয়ে পরামর্শ নিতে পারেন।
আপনি কি দাঁত কিড়মিড় করা থেকে মুক্তি পেয়েছেন? তাহলে আমাদের জানান কিভাবে মুক্তি পেলেন। আশা করি আপনার অভিজ্ঞতার আলোকে অন্যরাও উপকৃত হবেন।