সকালের একটা মধুর হাসি আপনার জন্য লাখ টাকার প্রশান্তি এনে দিতে পারে। তবে তার জন্য চাই সুন্দর, সুস্থ-সবল দাঁত। কিন্তু দাঁত থাকতে কি দাঁতের মর্যাদা আমরা দিচ্ছি? অনেকেই দিতে পারছি না। আর অনেকেই নিজের অজান্তে নিজেদের ক্ষতি করে ফেলছি। এ কথা ডেন্টিস্টদের।
তারা বলছেন, অনেকেরই দাঁত ব্রাশ করার পদ্ধতিটিই ভুল। সময় নির্বাচন ভুল। আবার অনেকেই ব্যবহার করছেন মেয়াদোত্তীর্ণ উপকরণ। আর একটি গবেষণাতো এও দেখাচ্ছে, অনেক মানুষ সকালের দাঁত ব্রাশকেই উপেক্ষা করেন। এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে লন্ডনের স্মাইলিং ডেন্টাল গ্রুপ’র চিকিৎসকরা দাঁতের যত্নের উপায় বাতলেছেন। এখানে সেগুলো তুলে ধরা হলো:
শক্ত ব্রেসলের ব্রাশ
সস্তার ১০-১৫ টাকা দামের ব্রাশ কিনে ভাবছেন টাকা বাঁচিয়ে ফেললেন। কিন্তু দাঁতের ক্ষতির কারণে যে আপনাকে হাজার হাজার টাকা খরচ করতে হবে সে কথা কি ভেবেছেন? এই ব্রাশগুলোর ব্রেসল অনেক শক্ত হয়ে থাকে যা দাঁতের উপরের এনামেলের ক্ষতি করে। তাই দাম দিয়ে হলেও একটু নামী ব্র্যান্ডের ভালো নরম ব্রিসলের ব্রাশ ব্যবহার করুন।
খুব বেশি জোরে ব্রাশ করা
অনেকে মনে করে জোরে জোরে চাপ দিয়ে ব্রাশ করলে তবেই দাঁতের ময়লা ভালো করে পরিষ্কার হবে এবং দ্রুত পরিষ্কার হবে। আর এতেই ক্ষতিটা হয় বেশি। খুব বেশি জোরে চাপ দিয়ে ব্রাশ করতে গেলে দাঁতের এনামেল নষ্ট হয়ে যাওয়ার ঝুঁকি থাকে।
এলোপাতাড়ি ব্রাশ করা
আমরা অনেকেই এলোপাতাড়ি দাঁত ব্রাশ করি বা বুঝি না কীভাবে সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করতে হয়। এর ফলে দাঁত নাজুক ও দুর্বল হয়ে পড়ে। ব্রাশের ব্রিসলকে ৪৫ ডিগ্রি করে ঘুরিয়ে ব্রাশ করতে হবে। ওপরের দাঁত পরিষ্কার করার সময় ব্রাশটি নিচের দিকে টানতে হবে, আর নিচের পাটি পরিষ্কারের সময় ওপরের দিকে টানতে হবে। সামনের অংশের পর ভেতরের অংশও ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
অনেক বেশি সময় ধরে ব্রাশ করা
অনেকেরই ধারণা অনেকটা সময় ধরে ব্রাশ করলে ভালো করে দাঁত পরিষ্কার হবেই। কিন্তু এটি সম্পূর্ণ ভুল একটি ধারণা। প্রতিটা জিনিসেরই একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। ২ মিনিটের বেশি দাঁত ব্রাশ করা, দাঁতের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।
খাওয়ার ঠিক পরপরই দাঁত ব্রাশ করে ফেলা
অতিরিক্ত সচেতন মানুষ দাঁতের সুরক্ষায় খাওয়ার পর পরই দাঁত ব্রাশ করে ফেলেন যা উল্টো দাঁতের ক্ষতিই করে বেশি। খাওয়ার পর পরই বিশেষ করে অ্যাসিডিক খাবার ও ফলমূল খাওয়ার পর দাঁত ব্রাশ করলে দাঁত ক্ষয় হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। খাওয়ার পরপর কুলকুচি করে, খাওয়ার অন্তত ৩০ থেকে ১ ঘণ্টা পর দাঁত ব্রাশ করাটাই সঠিক পদ্ধতি।
ভুল টুথপেস্ট
দাঁত সাদা করার জন্য আপনি ভুল টুথপেস্ট বেছে নিচ্ছেন না তো। দাঁতের ক্ষয় রোধের জন্য যেমন সঠিক ব্রাশ প্রয়োজন, ঠিক তেমনই প্রয়োজন সঠিক টুথপেস্টের। সঠিক উপাদানের টুথপেস্ট একটু বেশি দাম দেখে না কিনে বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রভাবিত হয়ে রংচঙে, ভালো স্বাদের টুথপেস্ট দিয়ে দিনে দু’বার ব্রাশ করেও দাঁত রক্ষা করা সম্ভব হবে না একেবারেই। সুতরাং সতর্ক হয়ে দাঁতের যত্ন নিন সঠিক পদ্ধতি মেনেই।
ভুল ব্রাশ
কেনার আগে অবশ্যই দেখে নিন ব্রাশটি নরম কি না। তবে গবেষকরা সতর্ক করে বলেছেন, সঠিক নিয়মে দাঁত ব্রাশ করা না হলে নরম ব্রাশও ব্যাকটেরিয়া রোধ করতে পারে না। তাই কোন ব্র্যান্ডের ব্রাশ কিনবেন এ বিষয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
ভালো করে না দেখা
দাঁত ব্রাশের সময় আমরা সাধারণত আয়নার দিকে ভালো করে খেয়াল করি না। অধিকাংশ সময় মাড়ি এবং জিহ্বা পরিষ্কারের কথা ভুলে যাই। এগুলো মুখের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এর ফলে প্লাক, ব্যাকটেরিয়া তৈরি হতে পারে, যার ফলে মাড়ি সংক্রমিত হয়। তাই ব্রাশ করার সময় জিহ্বা ও মাড়ি ভালোভাবে দেখে পরিষ্কার করতে হবে।
ভালোভাবে ধুতে হবে
দাঁত ব্রাশের পর অনেকেই তাড়াহুড়ো করে কুলি করেন। ফলে মুখের ব্যাকটেরিয়া মুখেই থেকে যায়। তাই ব্রাশের পর ভালোভাবে পানি দিয়ে মুখ ধুতে হবে বা অ্যালকোহল নেই এমন মাউথওয়াশ ব্যবহার করতে হবে।