ক্যালসিয়াম শরীরের খুব প্রয়োজনীয় মিনারেল। এটি হাড় ও দাঁত ভালো রাখে। এটি পেশি ও স্নায়ুর কার্যক্রম যথাযথ রাখতে সাহায্য করে। স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট টপ টেন হোম রেমেডি জানিয়েছে শরীরের ক্যালসিয়াম বাড়ানোর কিছু উপায়ের কথা।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার খান
শরীরে ক্যালসিয়াম বাড়াতে খাদ্য তালিকায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার রাখুন। অনেক খাবারেই ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। যেমন : দুধ, দুগ্ধজাত খাদ্য, দই, পনির, পালং শাক, কমলার রস, ব্রকলি, সয়াবিন ও অন্যান্য সয়া পণ্য ইত্যাদি। এসব খাবার নিয়মিত খান।
সকালে সূর্যের আলোতে যান
ভিটামিন ‘ডি’ শরীরে ক্যালসিয়াম শোষণে সাহায্য করে। আর সূর্যের আলো ভিটামিন ‘ডি’র অন্যতম উৎস। বিশেষ করে সকাল বেলার সূর্যের আলো এ ক্ষেত্রে খুব কার্যকর। তাই সকালবেলা সূর্যের আলোতে যান।
ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ খাবার খান
ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ খাবার খান। এ ক্ষেত্রে ভিটামিন ‘ডি’ সমৃদ্ধ মাছ, পনির, লিভার, ডিম, মাখন ইত্যাদি খেতে পারেন।
ক্যাফেইন বাদ দিন
অনেকেই দিন শুরু করে কফি পানের মধ্য দিয়ে। আপনি যদি ক্যালসিয়ামের ঘাটতিতে ভুগে থাকেন, তাহলে কফি পানের অভ্যাস বাদ দেওয়াই উত্তম। গবেষণায় বলা হয়, দিনে চার কাপের বেশি কফি পান হাড় ক্ষয় রোগ বাড়ায়। বিশেষ করে যেসব নারীর ক্যালসিয়ামের ঘাটতি রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এমনটা বেশি হয়।
লবণ খাওয়া কমান
বেশি লবণ খেলে শরীরে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হয়। এটি ক্যালসিয়াম শোষণে বাধা দেয়। লবণ ছাড়াও প্রক্রিয়াজাত খাবার খাওয়াও বাদ দিন। এতে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি হবে না। শরীরে ক্যালসিয়ামও বাড়বে।
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি এড়ানো
ক্যালসিয়ামের ঘাটতি এড়ানো প্রসঙ্গে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিটফোর্ড হাসপাতালের স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক রাতু রুমানা বিনতে রহমান জানান, কৈশোরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম-জাতীয় খাবার গ্রহণ করলে পরবর্তী সময়ে ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত সমস্যাগুলো কম হবে। আর বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনমতো ক্যালসিয়ামের ওষুধ গ্রহণ করলে সুস্থ থাকা যায়।
বয়স যাঁদের একটু বেশি
ক্যালসিয়ামের ঘাটতিজনিত সমস্যাগুলোয় সাধারণত মেয়েরাই বেশি ভোগে। বয়স একটু বেড়ে গেলে যখন মাসিক বন্ধ হয়ে যায়, সেই সময়টায় শারীরবৃত্তীয় কিছু পরিবর্তন হয় তাদের। ক্যালসিয়ামের অভাবে হাড়ক্ষয় হতে থাকে, হাড়ে হতে থাকে ফুটো (অস্টিওপোরোসিস)। অনেকগুলো ছোট-বড় ফুটোর কারণে ধীরে ধীরে হাড় হতে থাকে দুর্বল। দুর্বল হাড় একটু আঘাতেই ভেঙে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। আর বয়স বাড়লে ভাঙা হাড় জোড়া লাগাটাও খুব মুশকিল হয়ে পড়ে।
এসব সমস্যা এড়াতে ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবারের পাশাপাশি প্রয়োজন ক্যালসিয়ামের ওষুধও। তাই চিকিৎসকের পরামর্শমতো ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে হবে এই বয়সে।
গর্ভাবস্থায় ও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময়
গর্ভাবস্থায় ও শিশুকে বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় পুষ্টি উপাদানগুলোর চাহিদা এমনিতেই বেশি থাকে, এ সময় ক্যালসিয়ামের চাহিদাও বাড়ে। ক্যালসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার তো খাবেনই, খেতে হবে ক্যালসিয়ামের ওষুধও। এ সময় মা পর্যাপ্ত ক্যালসিয়াম না পেলে তাঁর সন্তানের হাড় ও দাঁতের গঠন সঠিকভাবে হয় না।
একটু সতর্কতা
ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট যিনি খাচ্ছেন, তাঁকে হয়তো কোনো কারণে আয়রন ট্যাবলেটও খেতে হচ্ছে। খেয়াল রাখতে হবে, যেন এ দুটি ওষুধ একই সঙ্গে খাওয়া না হয়। কেউ হয়তো দুপুরে আয়রন ট্যাবলেট খাচ্ছেন, তাঁকে সকালে ও রাতে ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে হবে। এ দুটি ওষুধ একই সঙ্গে খেলে আয়রন ট্যাবলেট থেকে খানিকটা কম উপকার পাওয়া যাবে।
তবে খেয়াল রাখতে হবে, ক্যালসিয়ামের সঙ্গে যেন অবশ্যই ভিটামিন ‘ডি’র ওষুধও খাওয়া হয়, তা না হলে ক্যালসিয়ামের থেকে উপকার পাওয়া যাবে সামান্যই। আজকাল অবশ্য ক্যালসিয়াম আর ভিটামিন ‘ডি’ একই সঙ্গে একই ট্যাবলেটের মধ্যে পাওয়া যায়।
অনেকে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খান। চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধটি সেবন করুন নিয়মিত। তবে যাঁদের আগে কখনো কিডনিতে পাথর হয়েছিল, তাঁরা চিকিৎসককে এই তথ্যটি দিতে ভুলবেন না যেন। কারণ, এ তথ্যের ভিত্তিতে চিকিৎসক আপনার জন্য ওষুধের মাত্রা ঠিক করে দেবেন। আপনার সমস্যাটির জন্য বাড়তি যেসব সতর্কতা প্রয়োজন, তা-ও তিনি আপনাকে বলে দেবেন।
কৈশোরেই হোক শুরু
বয়স একটু বেড়ে গেলেই যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে সমস্যায় পড়তে হয়, তা এড়াতে কৈশোর থেকেই প্রয়োজন সচেতনতা। দুধ ও দুধজাতীয় খাবারের পাশাপাশি খেতে হবে কাঁটাসহ ছোট মাছও। বাড়ন্ত এই বয়সটায় এমন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে একটি মেয়ের শরীরের হাড়ের মূল অংশটা ঠিকমতো তৈরি হবে। এভাবে ভবিষ্যতে হাড়ক্ষয় বা হাড়ে ফুটো হয়ে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার সমস্যা এড়ানো সম্ভব।
বয়স হলেই ক্যালসিয়াম বড়ি?
বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে, বিশেষ করে নারীদের মধ্যে প্রতিদিন দেশি-বিদেশি ক্যালসিয়াম বড়ি খাবার প্রবণতা দেখা দেয়। আবার এও শোনা যায় যে অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম বড়ি খেলে কিডনিতে পাথর হতে পারে। কোনটি ভালো? খাবার না ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট?
একটু হাত-পা ব্যথা, জোড় বা জয়েন্টের ব্যথা, শরীর ম্যাজম্যাজ করছে বা বয়স হয়েছে বলেই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট খেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। কেননা, দৈনন্দিন নানা খাবারেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। প্রতিদিন এ রকম খাবার থেকেই ক্যালসিয়ামের চাহিদা পূরণ করা যায়। অনেকে আবার নিজে নিজেই ওষুধের দোকান থেকে কিনে ক্যালসিয়াম বড়ি খান, যা ঠিক নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শমতো ওষুধটি সেবন করতে হবে।
শরীরে ভিটামিন ‘ডি’র অভাব থাকলে কিন্তু ক্যালসিয়াম থেকে উপকার পাওয়া যাবে সামান্যই। অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে কিডনিতে পাথর পর্যন্ত হতে পারে। আবার যাঁদের আগে কখনো কিডনিতে পাথর হয়েছিল, তাঁদের অতিরিক্ত ক্যালসিয়াম গ্রহণে পুনরায় পাথর হওয়ার আশঙ্কা আরও বেশি। তাই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করার সময় তথ্যটি সবার আগে জানবেন। কারণ ওষুধের মাত্রা ঠিক করতে এবং সমস্যাটির জন্য বাড়তি যেসব সতর্কতা প্রয়োজন তা নির্ধারণে তথ্যটি ভূমিকা পালন করবে।
এরপরও প্রয়োজন হলে…
তারপরও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ক্যালসিয়াম বড়ি সেবন করা যাবে বটে, তবে এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। সবচেয়ে সাধারণ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হলো গ্যাস্ট্রিক, কোষ্ঠকাঠিন্য ইত্যাদি। বেশ কিছু ওষুধ অন্ত্রে ক্যালসিয়ামের শোষণ কমিয়ে দেয়, বিশেষ করে যেসব ওষুধ অ্যাসিডিটি কমাতে ব্যবহৃত হয়। একসঙ্গে ৫০০ মিলিগ্রামের বেশি ক্যালসিয়াম ওষুধ অন্ত্রে শোষিত হয় না, তাই বেশি মাত্রার ওষুধ খেয়ে লাভ হয় না। ক্যালসিয়াম অন্ত্রে শোষণ করতে ভিটামিন ডি লাগে, তাই ভিটামিন ডি কম থাকলে এটিসহ খেতে হবে। সূর্যালোকে আছে প্রচুর ভিটামিন ডি। ডিমের কুসুম, লোনাপানির মাছেও আছে ডি ভিটামিন।
বয়স একটু বেড়ে গেলেই যে ক্যালসিয়ামের ঘাটতির কারণে সমস্যায় পড়তে হয়, তা এড়াতে কৈশোর থেকেই প্রয়োজন সচেতনতা। দুধ ও দুধজাতীয় খাবারের পাশাপাশি খেতে হবে কাঁটাসহ ছোট মাছও। বাড়ন্ত এই বয়সটায় এমন খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুললে একটি মেয়ের শরীরের হাড়ের মূল অংশটা ঠিকমতো তৈরি হবে। এভাবে ভবিষ্যতে হাড়ক্ষয় বা হাড়ে ফুটো হয়ে হাড় দুর্বল হয়ে যাওয়ার সমস্যা এড়ানো সম্ভব।