মাথায় হাত দিয়ে গ্যালারিতে বসেছিলেন দর্শকরা। কারো চোখে অবিশ্বাস, কারো ভ্রু কুঁচকে বিরক্তিতে। স্টেডিয়ামের গ্যালারি কিংবা টেলিভিশনের সামনে বসা দর্শক, সবার চোখে মুখে যেন একটাই প্রশ্ন- কী হলো বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের?
হতাশা আর আক্ষেপ ছাড়া কিছু ছিল না। খেই হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ। ১০ ওভার শেষেও রানটা ছিল ২ উইকেটে ৭৪। ওভারপ্রতি ৭-এর ওপরে। ওপেনার মোহাম্মদ মিথুনও আশা দেখাচ্ছিলেন কিছু একটা করার। কিন্তু সেখান থেকে বাংলাদেশ ইনিংস শেষ করল ১৩৩ রানে।
গত ম্যাচে ভারতের বিপক্ষে হতাশাজনক পরাজয়, সেটি ভুলিয়ে দেয়ার জন্য এর চেয়ে ভালো ম্যাচ আর হতে পারত না। সেটিতেও নিজেদের ইনিংস শেষে পরাজয়ের চোখরাঙানির সামনে বাংলাদেশ। তবে ব্যাটিং শেষে যা একটু আশা জাগছে, তার জন্য মাহমুদউল্লাহকে ধন্যবাদ দিয়ে কি পারা যায়? পরাজয় ভুলিয়ে দিলেন টাইগাররা।
শেষ ওভারে এক চার, এক ছয়ে এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানের ব্যাট থেকে ১৭ রান না এলে করুণ দেখাত বাংলাদেশের ইনিংসটিকে। টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিল সংযুক্ত আরব আমিরাত। সৌম্য-মিঠুনের
ব্যাটে সুন্দর সূচনাই এসেছিল। পাওয়ার প্লে-র ছয় ওভারেই ৪৮ রান করে ফেলেছিল দল। কিন্তু প্রথম ধাক্কাটা ৬ষ্ঠ ওভারেই।
গত কয়েকটি ম্যাচে কেন যেন বারবার ‘২০’-এর ঘরে গিয়ে আউট হয়ে যাচ্ছিলেন সৌম্য, আজও কিন্তু তাই। ১৪ বলে ২১ রানের ঝকঝকে ইনিংসটি সুন্দর কিছুর প্রত্যাশা জাগিয়েই শেষ। গত ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে সবচেয়ে বড় ইনিংসটা খেলা সাব্বিরও বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি আজ।
৭-৮ ওভারের গল্পটা মোহাম্মদ মিঠুনের নিজেকে চেনানো আর মুশফিক-সাকিবদের হতাশার। শুধু অনুশীলনে ভালো করছেন বলেই মিঠুনকে দলে সুযোগ দেয়ায় কোচ ও দলের ব্যবস্থাপনার কত সমালোচনা গত কদিন ধরে। সেটিরই জবাব দিয়ে দিলেন মিঠুন। দুই ছক্কায় উজ্জ্বল ইনিংসে ৪১ বলে ৪৭ রান করেছেন বাংলাদেশ ওপেনার।
মিঠুন আউট হতেই যেন পথ হারায় বাংলাদেশ ইনিংস। মুশফিক পারলেন না, সাকিবও ব্যাটে ব্যর্থ। বিশ্বকাপের আগে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের এই দুই ভরসার ফর্মে ফেরা খুব বেশিই জরুরি হয়ে উঠেছে।
সাকিবরা যা পারেননি, সেটিই শেষদিকে কিছুটা করার চেষ্টা করেছেন মাহমুদউল্লাহ। শেষ ওভারের ওই ১৭ রান তো ছিলই, সেই মুহূর্তে ২৭ বলে ৩৬ রানের ইনিংস খেলেছেন মাহমুদউল্লাহ। তার ইনিংসই এখন আশা জাগাচ্ছে বাংলাদেশকে।
এমনটাই তো চেয়েছিলেন টাইগার ভক্তরা। চেয়েছিল লাল সবুজের বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে শেষদিকে সময়োপযোগী এক ইনিংসে বাংলাদেশকে লড়ার মত রান এনে দিয়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ। ফিল্ডিংয়ে নিলেন দারুণ এক ক্যাচ। বল হাতে ২ উইকেট। অলরাউন্ড নৈপুণ্যে এবারের এশিয়া কাপে বাংলাদেশ পেল প্রথম জয়।
মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে এশিয়া কাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে সংযুক্ত আরব আমিরাতকে ৫১ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। ২০ ওভারে ৮ উইকেটে ১৩৩ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। আমিরাত ১৭.৪ ওভারে গুটিয়ে যায় ৮২ রানে।
টি-টোয়েন্টিতে এই প্রথম বোলিং করে প্রতিপক্ষকে অল আউট করল বাংলাদেশ। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে কম পুঁজি নিয়ে জয়ও এটিই। ২০১২ সালে বেলফাস্টে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে ১৪৬ রান করে মাশরাফিরা জিতেছিল ১ রানে। এবার সংযুক্ত আরব আমিরাতকে শোচনীয়ভাবে হারিয়ে এশিয়া কাপে রাজসিক প্রত্যাবর্তন করলো বাংলাদেশ ক্রিকেট দল।