অনেকেই বলে থাকেন, শৈশবে দ্রুত বা দেরিতে হাঁটতে শেখা পরবর্তী জীবনে ব্যক্তিত্বের ওপর প্রভাব ফেলে। আবার অনেকেই একে অ্যাথলিট হিসেবে শিশুর ভবিষ্যতের নির্ণায়ক হিসেবে বিবেচনা করেন। তবে এসব ধারণার কোনোটিই নিশ্চিত না হলেও একটি বিষয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। আর তা হলো, দ্রুত হাঁটতে শেখা শিশুর হাড় অন্যদের তুলনায় মজবুত হয়। যুক্তরাজ্যে পরিচালিত এক গবেষণার ফলাফল থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
যেসব শিশু অন্যদের তুলনায় দ্রুত কোনো অবলম্বন ছাড়াই হাঁটতে, দৌড়াতে ও লাফাতে শেখে, তাদের হাড় মজবুত হয়ে গড়ে ওঠে, যার সুফল তারা পায় পরবর্তী জীবনে। যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব ব্রিস্টলের গবেষকরা সম্প্রতি শিশুদের বেড়ে ওঠা ও পরবর্তী জীবনে এর প্রভাব-সম্পর্কিত একটি গবেষণা চালান। গবেষক দলটির নেতৃত্ব দেন ম্যানচেস্টার মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব হেলথকেয়ার সায়েন্সের গবেষক ড. অ্যালেক্স আয়ারল্যান্ড। এতে বলা হয়, ১৮ মাসের মধ্যে যে শিশুরা হাঁটতে, দৌড়াতে ও লাফাতে শিখে যায়, প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় তাদের হাড়ের গঠন অন্যদের তুলনায় মজবুত হয়। এ-বিষয়ক নিবন্ধটি জার্নাল অব বোন অ্যান্ড মিনারেল রিসার্চ পত্রিকায় সম্প্রতি প্রকাশ হয়েছে।
মূলত ১৯৯০ সালে ‘চিলড্রেন অব নাইনটিজ’ শীর্ষক একটি গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে ২ হাজার ৩২৭ জনের বিভিন্ন স্বাস্থ্য তথ্যের ওপর গবেষণাটি পরিচালিত হয়। ওই গবেষণায় ১৯৯০ সালের শুরুতে জন্ম নেয়া শিশুদের হাঁটতে শেখাসহ তাদের বেড়ে ওঠা-সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্য সন্নিবিষ্ট হয়। এতে অংশ নেয় মোট সাড়ে ১৪ হাজার শিশু, যাদের সারা জীবন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। পরে ১৭ বছর বয়সে এসব অংশগ্রহণকারীর কোমর ও নিতম্বের হাড়ের আকার, আকৃতি ও খনিজ উপাদান পরিমাপ করা হয়।
এতে দেখা যায়, শিশুদের হাঁটতে শেখার সময়ের সঙ্গে প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় তাদের মজবুত হাড়ের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যেসব শিশু ১৮ মাসের মধ্যে কোনো অবলম্বন ছাড়াই চলাচল করতে পারে, তাদের হাড় বয়সের সঙ্গে সঙ্গে মজবুত হয়। আর বিষয়টি নারীর চেয়ে পুরুষের ক্ষেত্রে বেশি কার্যকর। অর্থাৎ দ্রুত হাঁটতে বা চলাফেরা করতে শেখা মেয়েদের হাড়ের গঠনে বাড়তি কিছু সংযোজন করে না।
ড. অ্যালেক্স বলেন, শিশু বয়সে আমাদের চলাফেরা বয়স্ক অবস্থায় আমাদের হাড়ের গঠনের ওপর কীভাবে প্রভাব রাখে, তা বুঝতে গবেষণার ফলাফলটি আমাদের সাহায্য করেছে। আমাদের মনে হয়, শক্তিশালী পেশি এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখে। শৈশবে সক্রিয়তার কারণে পেশি শক্তিশালী হয়ে ওঠে। আর এ শক্তিশালী পেশি চলাফেরায় ব্যবহূত হাড়গুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করে। ফলে বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।
এ গবেষণার ফলাফল চিকিত্সকদের অস্টিওপরোসিস (এমন একটি রোগে, যাতে আক্রান্ত ব্যক্তির হাড় ভঙ্গুর হয়ে পড়ে) কিংবা হাড় পাতলা হয়ে যাওয়া রোগের ঝুঁকি নির্ণয়ে সাহায্য করবে। এমনকি হাড় ভাঙার ঝুঁকি নির্ণয়েও এটি চিকিত্সকদের সহায়তা করবে বলে গবেষকরা আশা প্রকাশ করেন।