কান সিটি সেন্টারের কাছে বাস থেকে নেমেছি। ঝট করে চোখ গেল সালমা হায়েকের দিকে। হাসিমুখে হাত নাড়ছেন দুনিয়াকাঁপানো মেক্সিকান অভিনেত্রী। কান নামের সিনেমার এই স্বর্গে চলচ্চিত্র উৎসবের মৌসুমে বিশ্বের তাবৎ তারকার ভিড়। তাই বলে সালমা হায়েক বাসস্টপে হাসিমুখে যাত্রীদের অভ্যর্থনা জানাবেন? ব্যাপার মোটেও তা নয়। আদতে শহরের প্রাণকেন্দ্রে বাসস্টপে ওটা সালমা হায়েকের বড়সড় একটা হাসিমুখের ছবি। নিচে বড় করে লেখা ‘সালমা হায়েক-২০১২’।
কানের বাসস্টপগুলোর শোভা এভাবেই বাড়াচ্ছেন তারকারাবাসস্টপে নায়িকাদের ছবি, এ আর এমন কী। আমাদের দেশেও তো দেয়ালে আর পথেঘাটে এমন কতশত সিনেমার পোস্টার। ওসব দেখার সময় আছে কার? কিন্তু ১২ মে ‘গার দ্য কান’ মানে কান স্টেশনে গিয়ে আবারও চমক। এবারে বাসস্টপে জর্জ ক্লুনি, শন কনারি, ক্যাথরিন জেটা জোন্সের দেখা মিলল। খানিক দূর এগিয়ে দেখি, ওরেব্বাস! এ যে তারকাদের মেলা বসে গেছে বাসস্টপে! রবার্ট ডি নিরো, শ্যারন স্টোন, ডায়ান ক্রগার, মাথিউ ম্যাকনহাই, বেনেসিও ডেল টোরো—কে নেই বাসস্টপে। রাজ্যের তারকারা যেন ঢাউস ছবির ভেতরে হাসিমুখে অপেক্ষায় আছেন যাত্রীদের অভ্যর্থনা জানাতে। ফরাসি অভিনেত্রী জুলিয়েন বিনোশ আর হলিউডের জুলিয়ান মুরকে পেলাম পাশাপাশি দুটো বাসস্টপে। এরপর যেখানেই যাই, আগে বাসস্টেশনটার দিকে তাকাই। ফরাসিতে জায়গার নাম মনে রাখা বড় শক্ত। এর চেয়ে বাসস্টপের নাম যদি আমি দিই জুলিয়ান মুর কিংবা সালমা হায়েক বাসস্টেশন, ক্ষতি কী!
কানের বাসস্টপগুলোর শোভা এভাবেই বাড়াচ্ছেন তারকারাকান চলচ্চিত্র উৎসবের সুদীর্ঘ ঐতিহ্যের সুবাদে কান শহরের কিছু বড়সড় দেয়ালে বেশ আগে থেকেই দেখা মিলত আলফ্রেড হিচকক বা মেরিলিন মনরোর মতো সিনেমাজগতের অমর নির্মাতা-অভিনয়শিল্পীদের। এবারে সব কটি বাসস্টপ এসেছে সাড়াজাগানো সিনেমা তারকাদের দখলে। কানের বাসিন্দা তরুণ বাস্তিয়েন গাস্তঁ বলছিলেন, ‘সিনেমাই এই শহরের প্রাণ। সব বাসস্টপে তারকাদের ছবি বসানোর কাজটা করেছেন এখানকার মেয়র। আমি মনে করি, এটা খুব মজার একটা ব্যাপার।’
দক্ষিণ ফ্রান্সের ছোট্ট শহর কানের ওয়েবসাইট বলছে, কান আর সিনেমা যেন সমার্থক। সিনেমাই বিশ্বজুড়ে পরিচিতি দিয়েছে কানকে। আর সেই সিনেমার মানুষদের কথা আরেকবার মনে করিয়ে দিতেই তাঁদের ছবিতে দেয়াল রাঙানোর মতো কাজগুলো করে তারা। ওয়েবসাইটে লেখা নেই, তবু বাসস্টপে বিশ্ব তারকাদের ছবি বসানোর বেলাতেও নিশ্চয়ই এ কথা সত্যি।