জঙ্গলের ভেতর দিয়ে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটছে গাব্রিয়েল। হৃদয় ভেঙে খান খান হয়ে গেছে মেয়েটার। গাব্রিয়েল ভাবেনি, এমন জঘন্যভাবে তাকে প্রত্যাখ্যান করতে পারে কেউ। ভাবেনি, সমস্ত আবেগ উজাড় করে লেখা তার প্রেমের চিঠিটা এমনভাবে ভেস্তে যাবে। হৃদয়ভাঙা বেদনা নিয়ে ছুটতে ছুটতে জঙ্গলে হারিয়ে যায় গাব্রিয়েল। অচেতন মেয়েটিকে পরদিন খুঁজে পাওয়া যায় জঙ্গলের ভেতরে একটা খাদের কিনারায়। কদিন পর সে সুস্থ হয় বটে, কিন্তু চারদিকে ততক্ষণে ঢি ঢি পড়ে গেছে। মাথায় ভালো রকমের গন্ডগোল আছে মেয়েটার!
এটি এক চলচ্চিত্রের গল্প। ছবিটার নাম ফ্রম দ্য ল্যান্ড অব দ্য মুন। গাব্রিয়েলের চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন ফরাসি অভিনেত্রী মারিয়ন কোতিয়াহ।
গতকাল কান সময় সকাল আটটায় গ্র্যান্ড থিয়েটার লুমিয়েরে ছবিটার প্রথম প্রদর্শনী দেখতে ঢুকি। ছবি শেষ করেই ছুট। ততক্ষণে উৎসব ভেন্যুতে চলে এসেছেন মারিয়ন কোতিয়াহ স্বয়ং। একই চলচ্চিত্রে অভিনয় করে ফ্রান্সের সম্মানজনক সিজার ও অস্কার জয়ের মতো অসাধারণ রেকর্ড জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর দখলে। তাঁকে প্রশ্ন করার সুযোগ হেলায় হারানো বোকামি ছাড়া আর কী!
সংবাদ সম্মেলনে দেখা পেতেই মারিয়নকে জানিয়ে দিলাম, অসাধারণ লেগেছে তাঁর অভিনয়। শুনে মারিয়ন খুব উচ্ছ্বসিত হলেন বলে মনে হলো না। অতএব পরের প্রসঙ্গ।
গাব্রিয়েল নামের ডাকাবুকো, স্বাধীনচেতা আর অন্যদের চোখে খুব স্বার্থপর মেয়েটি সম্পর্কে আপনার ভাবনা কী? মেয়েটি কেনইবা বা মনে ব্যথা পেলেই উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে যায় জঙ্গলে?
প্রশ্ন করেছি ইংরেজিতে। মারিয়ন উত্তর দিলেন ফরাসিতে। ভাগ্যিস, সময়মতো কানে অনুবাদযন্ত্রটা ছিল!
‘আমার মনে হয়, গাব্রিয়েলের মধ্যে একটা বুনো প্রবৃত্তি আছে। আর সেটাই ওকে টেনে নিয়ে যায় জঙ্গলে। উত্তরটা হয়তো আরও ভালো দিতে পারত নিকোল।’ নিকোল গার্সিয়া এ ছবির পরিচালক। কথাটা বলেই মারিয়ন তাকালেন পাশে বসা নিকোলের দিকে। নিকোল হেসে উত্তরটা আবার ঘুরিয়ে দিলেন মারিয়নের দিকেই। মারিয়ন খানিক ভেবেচিন্তে আবার শুরু করলেন, ‘আমার মনে হয় সে হয়তো জঙ্গল ভালোবাসে। জঙ্গল এমন একটা ব্যাপার যার কোনো সীমা নেই। গাব্রিয়েলের ভেতরকার বুনো প্রবৃত্তিই হয়তো ওকে টেনে নিয়ে যায় সেখানে। জঙ্গল কিন্তু খুব ভয়ংকরও হতে পারে। আর বিপজ্জনক আচরণের ব্যাপারটা গাব্রিয়েলের মধ্যে সব সময় আছে।’
রাসেল ক্রো আর শিয়া লেবফ: গতকাল কান উৎসবে ফ্রম দ্য ল্যান্ড অব দ্য মুন ছবির প্রচারণায় আসা তারকাদের তালিকায় আরও ছিলেন রাসেল ক্রো, রায়ান গসলিং এবং শিয়া লেবফের মতো অভিনেতারা। দিনের শেষভাগে রাসেল ক্রো মাত করেছেন উৎসব। তাঁর দ্য নাইস গাইজ ছবির প্রচারণায় কান উৎসবে এসেছেন গ্ল্যাডিয়েটর এবং এ বিউটিফুল মাইন্ড-এর মতো অবিস্মরণীয় ছবির এই তারকা অভিনেতা। ১৯৭০-এর দশকের লস অ্যাঞ্জেলেসের পটভূমিতে তৈরি দ্য নাইস গাইজ ছবির কাহিনি রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এক মেয়েকে নিয়ে।
ট্রান্সফরমারস ছবির তারকা শিয়া লেবফ এসেছেন তাঁর প্রতিযোগিতা বিভাগের ছবি আমেরিকান হানির প্রচারণায়।
কান ক্লাসিকসে বাংলাদেশ: গতকাল কান ক্লাসিকস বিভাগে প্রদর্শিত হয়েছে জাগো হুয়া সাভেরা (ডে শ্যাল ডন)। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত ১৯৫৮ সালের এই ছবিতে মুখ্য ভূমিকায় আছেন খান আতা। এ জে কারদারের এই ছবিটি মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কার জিতেছিল।
উৎসবে পাকিস্তানের ছবি হিসেবে প্রদর্শিত হলেও এটি জুড়ে আছে বাংলাদেশ। ছবিটির শুটিং হয়েছে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান, মানে আমাদের বাংলাদেশে। এর সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন জহির রায়হান। জাগো হুয়া সাভেরা নতুনভাবে প্রদর্শন উপযোগী করে তুলেছে লন্ডনের ডিলাক্স রিস্টোরেশন।