শুক্রবার সারাদেশে মুক্তি পাচ্ছে সাফিউদ্দিন সাফি পরিচালিত ‘র্পূণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি দুই’ সিনেমাটি। সিনেমাতে শাকিব খানের বিপরীতে আবারও দেখা যাবে জয়া আহসানকে। নিজের নতুন সিনেমা, টালিগঞ্জ ও ঢাকায় ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বললেন এই অভিনেত্রী।
গ্লিটজ:‘র্পূণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনি দুই’ সিনেমায় নতুন কোনো অবতারে আবির্ভূত হচ্ছেন?
জয়া আহসান: নতুন অবতারে বলে তো কথা নয়..কারন এটাতো ফরমেটেড সিনেমা। তবে সিনেমার গল্পটা মৌলিক, সেই জায়গাটা থেকে একটা নতুনত্ব আছে। ক্রিকেটার ও একজন মডেল…দুই গ্ল্যামার ওর্য়াল্ডের দুইজন মানুষের সর্ম্পক..তাদের মধ্যেকার সম্পর্কের টানাপড়েন দেখা যাবে সিনেমাতে। কিন্তু সেখানে পেশাগতভাবে একেবারে নতুনভাবে আমাকে উপস্থাপন করছে কিংবা চরিত্রগতভাবে আমাকে নতুন কোনো অবতারে দেখাচ্ছে মোটেও তেমনটি নয়।
গ্লিটজ:‘র্পূণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী’ সিনেমার সিকুয়ালে কাজ করলেন। সিকুয়ালে কাজ করার বিষয়টিকে আপনি কিভাবে দেখেন?
জয়া আহসান: আলাদা করে কিছু বলার নেই। সিকুয়ালের বিষয়টা বলতে..আসলে সেই আগের শিল্পীরাই এই সিনেমায় রয়েছে। নতুন একটা গল্পে ডিজাইনটা আলাদা। সেই একই দল আমরা কাজ করেছি, গল্পের নামটিও একই রাখা হয়েছে।
গ্লিটজ: ‘র্পূণদৈর্ঘ্য প্রেমকাহিনী দুই’ সিনেমাটি মুক্তি পাচ্ছে ঢাকাই সিনেমার এক প্রথম সারির নায়িকার সিনেমার সঙ্গে। সেক্ষেত্রে কোনো ঝুঁকির মুখোমুখি হচ্ছেন বলে মনে করেন?
জয়া আহসান: আসলে এখানে আমার ব্যক্তিগত ঝুঁকির জায়গার তুলনায় সিনেমার র্নিমাতা কিংবা সিনেমাটি ঝুঁকির মধ্যে পড়ে যায়। কারন সিনেমার দর্শক ভাগ হয়ে যায়। মন্দার বাজারে এই বিষয়টি নিয়ে দর্শক, সিনেমার প্রযোজক কিংবা র্নিমাতা বলতে পারবেন। কিন্তু আমার জায়গা থেকে আমি বলবো একসঙ্গে অনেকগুলো ভালো সিনেমা মুক্তি পাওয়া খুবই জরুরী। তাই আমি চাই আমাদের সাথে যে সিনেমাটা মুক্তি পাচ্ছে সেই সিনেমাটাও ব্যবসাসফল হোক। কারণ সেই সিনেমাটি ব্যবসাসফল হলে এবং প্রেক্ষাগৃহে বেশি দর্শক গেলে আমাদের সিনেমাতেও তার একটি প্রভাব পড়বে। আবার আমাদের সিনেমাটি বেশি দর্শক দেখতে গেলে ঐ সিনেমার ওপরও একটা প্রভাব পড়বে। ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয় না, আমি কোনোভাবেই চাই না শুধুমাত্র আমার সিনেমাটি ব্যবসাসফল হোক। আমি চাই এই সময়ে যতগুলো সিনেমা রয়েছে, যেগুলোই মুক্তি পাবে সবগুলোই ব্যবসাসফল হোক। এবং দশর্কের প্রেক্ষাগৃহে যাওয়ার প্রবৃত্তিটা বাড়াতে হবে, সেটা আমার সিনেমা থেকেই হোক..বিষয়টাকে আমি খুবই পজিটিভলি দেখতে চাই।
গ্লিটজ: আপনি বাংলাদেশের পাট চুকিয়ে ভারতেই থিতু হয়ে যাচ্ছেন বলে চারিদিকে গুঞ্জন রয়েছে। আসলেই কি তাই?
ছবি: তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ছবি: তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
জয়া আহসান: আমার জায়গা থেকে মোটেই বিষয়টি এমন নয়। আমার হাতে বতর্মানে ঢাকায় দুটো সিনেমার কাজ রয়েছে। ঢাকায় এই সিনেমাগুলোর কাজ শেষ করেই আমি আবার কলকাতা ফিরে যাবো। সেখানে আমার আরেকটা সিনেমার কাজ রয়েছে। আমার যখন যেখানে কাজ থাকে আমি সেখানেই কাজ করি। আমি কখনোই ওখানে ‘ফোকাসড’ নই, এবং ‘ফোকাসড’ হওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না।
গ্লিটজ: তাহলে কি আমরা বলতে পারি, কাজের ক্ষেত্রে বাংলাদেশকেই বেশি প্রাধান্য দিচ্ছেন আপনি?
জয়া আহসান: বাংলাদেশ আমার মাতৃভূমি..ঢাকা আমার নিজের শহর..বাংলা আমার মাতৃভাষা..এটা আমার দেশ। আমি কেন এই জায়গা ছেড়ে ওখানে গিয়ে কাজ করবো। সেখানে (টালিগঞ্জ) সম্মানের সাথে আমাকে শিল্পী হিসেবে ডেকে নিয়ে যায়, আমাকে সম্মান করে..মৌলিক শিল্পী হিসেবে মুল্যায়ন করে..যৌথ প্রযোজনার শিল্পী হিসেবে নয়। তারা নিজেদের থেকে আমাকে খুঁজে বের করে তাদের সাথে কাজ করিয়েছেন। অন্য শিল্পীদের ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে কি না আমার জানা নেই। আমার ক্ষেত্রে যেহেতু এমনটি হয়েছে সেক্ষেত্রে আমি তো সেটার মুল্য অবশ্যই দেবো..কেনো দেবো না। সেটা যদি ভারতের না হয়ে যদি চাইনিজ, হিব্রু, জাপানিজ কিংবা ইরানী ভাষার সিনেমাও করতে হয় এবং তারা যদি আমাকে ডাকে তাহলে আমি অবশ্যই অভিনয় করবো। আমি সেটা করতে আগ্রহী। কারন আমি বিশ্বাস করি আর্টিস্টের কোনো ভৌগলিক সীমারেখা থাকে না। একজন শিল্পীর শিকড় থাকে একটি জায়গায়। মানুষ তার নিজের দেশে সবচেয়ে ভালো কাজটি করে বলে আমার বিশ্বাস। আমি আমার নিজের দেশে নিজের ভাষায় আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজটি করবো, আমি সেই অপেক্ষাতেই আছি। কিন্তু একই সাথে অন্যান্য জায়গাতেও আমি নিজেকে এক্সপ্লোর করতে চাই। বিশ্বায়নের এই যুগে আমাকে ভালো কাজের জন্য প্রস্তাব দিলে আমি অবশ্যই সেই কাজ করবো। যে কাজ করে আমার শিল্পী সত্তা তৃপ্ত হবে আমার মূল কাজ হলো সেটাই। সেটা বাংলাদেশে কিংবা অন্য যে কোনো জায়গায় হতে পারে। তবে আমার বাংলাদেশে কাজ করে..আমার আনন্দের জায়গাটা অনেক বেশি।
গ্লিটজ: ঢাকাই সিনেমা এবং টালিগঞ্জ – কোথায় পেশাদারিত্ব বেশি বলে মনে করেন?
জয়া আহসান: কাজের ক্ষেত্রে আমার সবচেয়ে বেশি প্রেম বাংলাদেশের প্রতি। কিন্তু পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে বলতে গেলে অবশ্যই কলকাতা। এটা কেবল আমি নই বরং আমাদের যেসব শিল্পী ও র্নিমাতারা বাইরে কাজ করেছেন তারাই এই কথা বলতে পারেন। এটা আমাদের একটি সীমাবদ্ধতা। আমাদের এখানে পেশাদারিত্বের জায়গা যদি বলি .. জুতো সেলাই থেকে চণ্ডিপাঠ পর্যন্ত সব কিছুই আমাদের র্নিমাতাদের করতে হয়। যেমন আমাদের এখানে এখনো কস্টিউম ডিপাটর্মেন্ট নাই যেমনটি ওখানে রয়েছে। ফলে এখানে সিনেমার কাজের সময়ে আমাকে আমার পোশাক নিয়ে সময় নষ্ট করতে হয়। অথচ এই সময়টা আমি অভিনয়ে দিতে পারলে তা আমার অভিনয়ের জন্য ভালো হতো। কিন্তু কলকাতায় আমাকে শুধুমাত্র মন দিয়ে অভিনয়টা নিয়েই ভাবতে হয়। সেখানে র্নিমাতা, ডিওপি, মেইকআপ আর্টিস্টসহ ইউনিটের প্রত্যেকেই প্রত্যেকের কাজের ব্যাপারে সৎ। যেটা এখনো আমাদের এখানে অনুপস্থিত।
গ্লিটজ: ‘রাজকাহিনী’ সিনেমায় স্বল্প সময়ের উপস্থিতি আপনার ইমেজকে ক্ষুন্ন করেছে বলে মনে করেন কি?
ছবি: তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
ছবি: তানজিল আহমেদ জনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
জয়া আহসান: সিনেমাটি মূলত ভারতের দেশভাগ নিয়ে নির্মিত একটি গুরুত্বর্পূন সিনেমা। ‘রাজকাহিনী’ সিনেমায় আমার থেকে অনেক শক্তিশালী অভিনয়শিল্পীরা মাত্র দুই লাইন পাঠ করার জন্য সিনেমায় অভিনয় করেছেন। আমাকে যখন এই সিনেমায় অভিনয়ের জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়, আমার দেশেরই সাথে মিলে যায় এমন কাছাকাছি চরিত্রে অভিনয় করতে বলা হয়েছে, সেক্ষেত্রে আমি কেন অভিনয় করবো না? সিনেমার দৃশ্য ধারণের পরে সম্পাদনার টেবিলে গিয়ে অনেক কিছুই বদলে যায়, যার দায়িত্ব র্নিমাতার, আমার নয়। সেক্ষেত্রে আমার কিছু করারও থাকে না..কিছু বলারও নেই। সিনেমার দৈর্ঘ্য বেশি হয়ে যাওয়ার ফলে অনেক দৃশ্য কেটে ফেলতে হয়েছে। সেখানে আমার অভিনীত দৃশ্যও কেটে ফেলা হয়েছে। র্নিমাতা সিনেমাটি যেভাবে দেখাতে চায় দর্শক সেভাবেই দেখতে পারবে। ‘রাজকাহিনী’ সিনেমায় আমার চরিত্রটিতে আমি অভিনয় করেছি, কারণ এই চরিত্রটিতে অভিনয় করতে আমি গিয়েছি।
গ্লিটজ: ঢাকাই সিনেমা ও টালিগঞ্জের নায়িকাদের মধ্যে নিজেকে কোন কাতারে ফেলবেন?
জয়া আহসান: র্শীষস্থানীয় নায়িকা নয় বরং আমি টেলিভিশনে অভিনয় করার সময় থেকেই বলেছি আমি ভালো চরিত্রে অভিনয় করতে চাই। র্শীষস্থানীয় নায়িকা হয়ে আমি কোনো কিছুই বদলে ফেলতে পারবো না। আমি আমার জায়গা থেকে একটা নাড়া দিতে পারবো। সব সময় আমি মিনিংফুল জায়গায় কাজ করতে চাই। বাণিজ্যিক সিনেমার ক্ষেত্রে অনেকটা জায়গা আমি নিজেকে যাচাই করতে চেয়েছি, সেখানে আমি সফল কি না অথবা সেই জায়গাটায় আমি কেমন করতে পারি। একজন অভিনেতা যেমনি নিজের ডাইমেনশন খোঁজেন তেমনি আমিও নিজের ডাইমেনশন খোঁজার চেষ্টা করেছি।
গ্লিটজ: এ সময়ের কাজের ব্যস্ততা নিয়ে জানতে চাই..
জয়া আহসান: সম্প্রতি কলকাতায় অরিন্দম শীলের ছবি ‘ঈগলের চোখ’-এর কাজ শেষ করলাম। এছাড়াও সেখানে ‘খাঁচা’ সিনেমার কাজও শেষ করেছি। এখন বাংলাদেশে নুরুল আলম আতিকের ‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ সিনেমা নিয়ে চলছে ব্যস্ততা। ঢাকার কাজ শেষ হলেই আবার কলকাতায় কাজের জন্য পাড়ি জমাবো। সেখানে মনোজ মিশিগানের ‘আমি জয় চ্যাটার্জি’ ছবিতে অভিনয়ের কথা আছে।